ব্লগারের পরিচয়

My photo
কোলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ, India

Tuesday, 17 April 2007

ফিরে দেখা

১৯৪৭, ১৪ই অগস্ট, রাত বারোটা, পূর্ব বঙ্গ হয়ে গেল পূর্ব পাকিস্তান

প্রতি দিন হু হু করে বাড়তে লাগল বঙ্গের পশ্চিম পারের জনসংখ্যা। নতুন পূর্ব পাকিস্তান থেকে দলে দলে মানুষ চলে আসতে লাগলেন 'দেশান্তরে'। লক্ষ করার বিষয়, পশ্চিম ও পূর্ব, দুই পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তুরা কিন্তু একভাবে এলেন না। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে যাঁরা এলেন, এলেন মোটামুটি একসময়েই। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ কিন্তু আসতে লাগলেন ঢেউয়ে ঢেউয়ে, বছরে বছরে। '৪০ - '৫০-এর দশক ছাড়িয়ে '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পরেও, এমনকি আজও সঙ্গোপনে নিয়ত বহমান সেই শরণার্থী-ধারা।
সে সময়ই, ১৯৪৮-এ, University Institute Hall-এ এক ভাষণে পশ্চিমবঙ্গবাসীর উদ্দেশ্যে ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার উচ্চারণ করেছিলেন এই মোক্ষম সাবধানবাণী:"I warn West Bengal - do not spurn away such a rich racial element when seeking shelter at your doors. They alone can make you great if you utilise these human materials." এ দিকের সাবেক বাসিন্দাদের মনে তখন মিশ্র অনুভূত। 'ওদের' জন্য সহমর্মিতা, আর নিজেদের জন্য ভবিষ্যতের ভয়। কিন্তু বিপন্নতার তাড়নায় যেন এই শরণার্থী-বেশে-আসা প্রতিশ্রুতিময় মানবসম্পদকে পশ্চিমবঙ্গ কৃপার চোখে না দেখে, দূরে ঠেলে না দেয়: এই কথাটিই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যদুনাথ।
না, পশ্চিমবঙ্গ দূরে ঠেলে দেয়নি। ধৈর্য ও সমব্যথার সঙ্গে এই শরণার্থী স্রোতকে জায়গা করে দিয়েছিল। কাজটা ছিল কঠিন। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নামমাত্র সাহায্যের বেশি কিছু করেনি। পুরো দায়টাই বহন করেছিল সদ্যোজাত, সদ্যোবিভক্ত, অনভিজ্ঞ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। কেন্দ্রের ব্যবহারে আঞ্চলিক বৈষম্যও ছিল বৈকি। পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্বাস্তুদের জন্য ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের যে অর্থ ব্যয়িত হয়েছিল, পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীর জন্য তার এক দশমাংশও হল না। তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের ভাষায়, পশ্চিমবঙ্গে আগত উদ্বাস্তুদের জন্য কেন্দ্রের খরচ - 'মাথাপিছু দুই বছরে কুড়ি টাকার বেশি নয়।'
প্রসঙ্গত, এমনিতেও বিরাট অর্থনৈতিক সংকটে ছিল সে দিনের পশ্চিমবঙ্গ। পাট ছিল প্রধান কৃষিজাত পণ্য। দেশভাগের সঙ্গে পাট-উত্পাদক অঞলগুলি বেরিয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গের নাগাল থেকে, পড়ে রইল কেবল ইতস্তত বিক্ষিপ্ত, ধুঁকতে থাকা কলকারখানা।
এই সামগ্রিক চাপের মধ্যেও উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের বিপুল দায় যে সে দিনের রাজ্য প্রশাসন পালন করতে পেরেছিল, কেননা এতে বড় একটা ভূমিকা নিল - সমাজ। কত মানুষ যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এগিয়ে এলেন সাহায্য করতে। প্রায় একটা সামাজিক আন্দোলন বলা চলে। যে আন্দোলনের ইতিহাস কখনও লেখা হয়নি, হয়তো হবেও না। কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে নানারকম বাঙ্গালি মিলেমিশে যে একটা নতুন সমাজ তৈরি করে তুলল, তাকে প্রতি দিন সাংস্কৃতিক ভাবে সম্পন্ন করে চলল ঘটি-বাঙাল, মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল, চিংড়ি-ইলিশ বিতর্ক; বেকার সমস্যা বৃদ্ধি; পাড়ার রকের আড্ডার ক্রমবিকাশ; বামপন্থি সাহিত্য সংস্কৃতি কৃষ্টি।
ঐতিহাসিক ভাবে, আর দুটি বড় ঘটনা ঘটল ক্রমে। ভারতের communist party পশ্চিমবঙ্গে যে দ্রুত শক্তিশালী হয়ে উঠল, তার পিছনে বিরাট ভূমিকা নিয়েছিল এই উদ্বাস্তু পুনর্বাসন, উদ্বাস্তু colony-এর মানবিকীকরণের কাজ। সবচেয়ে বড় communist সমর্থক বাহিনী তৈরি হয়ে উঠতে লাগল এই নতুন আশ্রিত জনগোষ্ঠির মধ্যে থেকে।
দ্বিতীয়ত, উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে গেল মেয়েদের জীবনে ৷ তীব্র অনটন, আর্থিক দুর্দশা এবং পারিবারিক চাপের মুখে বড় দ্রুত ভেঙ্গে গেল অন্তঃপুরের অবরোধ। বাঙ্গালি মেয়েরা আগেও চাকরি করত, সমাজসেবায় যোগ দিত, কিন্তু সে ছিল হাতে গোনা। ১৯৪৭-এর পর, পরিবারের সব ক'জন সদস্যের কাজের খোঁজে না বেরিয়ে আর উপায় থাকল না। বাঙ্গালি মেয়েদের কাছে নারীশিক্ষা তখন আর পোশাকি বিলাশ নয়, পরিবারকে দাঁড় করানোর একান্ত মলিন বাস্তবে বেরিয়ে পড়ার সিঁড়ি।
পাওয়া, হারানো, এবং নতুন অর্জন: ১৯৪৭, পশ্চিমবঙ্গের জন্য রেখে গেল আলাদা তিনটি উত্তরাধিকার।


Best viewed by AdorshoLipi font. If not installed in your system, then download and paste the font file in [Fonts] folder. Go to Control Panel, Switch to Classic View (if Control Panel is in Category View, otherwise skip this step)*, right click on Fonts folder and paste.

* Applicable for M.S. Windows XP

1 comment:

I said...

Lekha Chaliye jaan. West Begal theke Bangla blogger er sonkhya boroi kom.

Aasha kori aapnar theke aaro valo lekha pabo.

Englihs font e likhte holo bole dukhhito. Actually ekhon je computer theke dekhchhi sekhane bangla lekhar jonno kono software install nei.

Blog Archive