কেউ কথা রাখেনি
কেউ কথা রাখেনি,
৩৩ বছর কাটলো
কেউ কথা রাখেনি।
ছেলেবেলায় এক বোষ্টমি তাঁর আগমণী গান,
হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল -
শুক্লা দ্বাদশীর দিন
অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে,
তারপর কত চন্দ্রভুক অমাবষ্যা চলে গেল,
কিন্তু সে বোষ্টমী আর এলো না
২৫ বছর প্রতীক্ষায় আছি।
মামাবাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল -
বড় হও দাদাঠাকুর,
তোমাকে আমি তিনপ্রহরির বিল দেখাতে নিয়ে যাবো,
যেখানে পদ্মফুলের মাথায়, সাপ আর ভ্রমর খেলা করে।
নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো?
আমার মাথায় ঘরের ছাঁদ ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে,
তারপর তুমি আমায় তিনপ্রহরের বিল দেখাবে?
একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনও,
লাঠি লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্কর বাড়ির ছেলেরা
ভিখিরির মত চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি -
ভিতরে রাস উৎসব;
অবিরল রঙ্গের ধারার মধ্যে
সুবর্ণ কঙ্কন পড়া ফর্সা রমনীরা,
কত রকম আমোদে হেসেছে,
আমার দিকে তাঁরা ফিরেও চায়নি।
বাবা আমার কাঁধ ছুঁইয়ে বলেছিলেন -
দেখিস, একদিন আমরাও ...
বাবা এখন অন্ধ,
আমাদের দেখা হয়নি কিছুই;
সেই রয়্যাল গুলি,
সেই লাঠি লজেন্স,
সেই রাস উৎসব আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবে না;
বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে,
বরুণা বলেছিল -
যেদিন আমায় সত্যি কারের ভালবাসবে,
সেইদিন আমার বুকেও এরকম আঁতরের গন্ধ হবে।
ভালবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়েছি
দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্ব সংসার তন্য তন্য করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীল পদ্ম
তবু, তবু কথা রাখেনি বরুণা
এখন তাঁর বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
এখন সে যে কোনো নারী।
কেউ কথা রাখেনি
৩৩ বছর কাটলো
কেউ কথা রাখেনা।।
কবিতা - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
আবৃত্তি - শিমূল মুস্তাফা