ব্লগারের পরিচয়

My photo
কোলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ, India

তোতা পাখির উপাখ্যান

Friday, 12 September 2008

বিক্ষিপ্ত

সেই রাতে রাত ছিল পূর্ণিমা.. জোছনার আলোয় তোমাকে রহস্যময়ি লাগছিল.. শহুরে জীবনে লোডশেডিং না হলে নাকি জোছনাকে উপলব্ধি করা যায়না.. মেঘলা রাতের মায়াবী আধো আলো-ছায়াতে আমি তোমাকে কল্পনা করে নিয়েছিলাম.. আমার উচ্ছাসে তুমি প্রথমে খুব হাসলে.. তারপর যেন কোনো বিসন্নতার কালো চাদরের প্রতিফলন পড়লো তোমার উপর.. আমি চেয়েছিলাম সেই রাহুর গ্রাস থেকে তোমাকে মুক্ত করতে.. কপট রাগ, মিথ্যা হিংসুটে ভাব দেখিয়ে চেয়েছিলাম তোমাকে গ্রহণমুক্ত করতে.. কিন্তু তুমি কি চেয়েছিলে রাহুমুক্ত হতে? চাওনি, তবুও কিছুদিন সহযোগিতা করলে, নিজের অজান্তেই হয়তো আমাকে আপন করে নিলে বা হয়তো কোনোদিন আপন মনে করোইনি, হয়তোবা সবই ছিল তোমার ছলনা.. বুঝিনি রোগটা ছিল ছোঁয়াচে, যে রোগ থেকে তোমাকে বাঁচাতে চেয়েছি, শেষ পর্যন্ত তাতেই আমি আজ রোগাক্রান্ত..

Friday, 5 September 2008

আমার সব শিল্পের মৃত্যু হোক এইখানে

যদি আমি তোমার কষ্টে ব্যথা না পাই
তোমার হতাশাকে উপলব্ধি করতে না পারি
যদি মানুষের হাহাকার, গণহত্যায় জেগে না উঠি,
আমার সব শিল্পের মৃত্যু হোক এইখানে

তোমার বুকের আগুন আর সৃষ্টির ছোঁয়ায়
আমার কবিতা থেকে যদি বৃষ্টি না ঝড়ে পড়ে
সব জেনেও তোমায় ভালোবাসতে না পারি
আমার সব শিল্পের মৃত্যু হোক এইখানে

যদি তোমার খোলা হাসিতে আমার অন্তর জেগে না ওঠে
যদি রাতের তমসাচ্ছন্ন ভোরের আলোর স্নিগ্ধতা মেখে
আমি তোমার ছবি আঁকতে না পারি
আমার সব শিল্পের মৃত্যু হোক এইখানে

কিসের জন্য আমার এ জীবন?
যদি আকাশের বিশালতার কাছে মাথা নত না করি
নিজেকে বারবার ভাঙতে না পারি, শুধুই থাকি অভিমানে
আমার সব শিল্পের মৃত্যু হোক এইখানে

Tuesday, 26 August 2008

স্মৃতি

স্বপ্নগুলো মোর ঢেকেছে বিষাদে
স্মৃতিগুলো তাই আজ নিরবে কাঁদে
কেন পারিনা তোমাকে ভুলে যেতে
পিছু ডাকে স্মৃতি প্রতি রাতে
কেন চোখে জল আসে
কেন মনে পড়ে তোমাকে

জীবনের নাম যদি রাখা হয় ভুল
স্মৃতির নাম তবে বেদনার ফুল
যা কিছু পেয়েছি আমি তা আমার নয়
চিঠি যেন এসে গেছে ভুল ঠিকানায়
খুঁজে পাওয়া যাবে না তো হারালো যে কূল
ভুল সবই ভুল

পাবে না তো খুঁজে কেউ আমার খবর
মনের অনেক নিচে দিয়েছি কবর
যদি কেউ আসে তবে বোলো আমি নেই
চোখে জল আসবে মনে পড়লেই
ফুটেছে আমার বুকে ব্যথার বকুল
ভুল সবই ভুল

Saturday, 12 July 2008

অস্তরাগ


শেষ অস্তরাগের নিঃশব্দ মায়াবী আলোয়
তোমার ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়
তবুও অবুঝ আমি জানিনা কোন মোহে
কেন আমার সময় কাটে তোমার প্রতীক্ষায়?

Monday, 7 July 2008

আমি আর আমার একাকীত্ব

আমি আর আমার একাকীত্ব
প্রায়শঃই এই কথা বলাবলি করি-

তুমি থাকতে তো কেমন হতো
তুমি এটা বলতে, তুমি ওটা বলতে
তুমি এই কথায় অবাক হতে
ঐ কথায় কতটা হাসতে
তুমি থাকতে তো এমন হতো
তুমি থাকতে তো অমন হতো

আমি আর আমার একাকীত্ব
প্রায়শঃই এই কথা বলাবলি করি

এটা কি রাত নাকি তোমার খোলা, এলো চুল
জোছনা নাকি তোমার চাহনিতে স্নাত আমার রজনি
একি চাঁদ নাকি তোমার হাতের চুড়ি
তারা নাকি তোমার শাড়ীর আঁচল
দমকা বাতাস নাকি তোমার দেহের সুগন্ধ
পাতা ঝরার শব্দ নাকি তুমি চুপিচুপি কিছু বললে
আমি ভাবতে থাকি আনমনে জড়সড় চুপচাপ
যদিও আমি জানি -
তুমি নেই, কোথাও নেই!
কিন্তু মন বলে তুমি আছো
এইখানেই কোথাও আছো

দায়বদ্ধতা আমারও আছে, তোমারও
নিস্তব্ধ, বিনিদ্র রজনি আমিও কাটাই, তুমিও
অশ্রু জলে বালিশের কোনা ভেজে এখানেও, ওখানেও
বলার তো অনেক কিছুই আছে, কিন্তু কাকেই বা বলি আমি
কত দিন চুপ থাকবো, আর কত কাল আমি সইব
মন বলে- পৃথিবীর যত নিয়ম-কানুন আছে, উঠিয়ে দিই
প্রাচীর যা তোমার-আমার মধ্যে বাধা হয়ে আছে, ভেঙ্গে ফেলি
কেন আমার হৃদয় জ্বলছে সবাইকে জানিয়ে দিই-
হ্যাঁ, আমি ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি
...

Sunday, 8 June 2008

শিরোনামহীন কবিতা


কাঠ জ্বলে কয়লা হয়ে যায়
কয়লা পুড়ে হয়ে যায় ছাই
হৃদয় জ্বলেপুড়ে হয়না কিছুই
না ধোঁয়া না পড়ে রয় ছাই

কথা দিয়েছিলে যা সবই মনভোলানো
মন ভুলিয়েছিলে যা'বলে তা সব সাজানো
জানিনা সারবে কবে সে চোট পুরানো
কবে ফিরে পাবো সে মন হারানো

বরফ গলে জল হয়ে বয়ে যায়
মেঘ হয়ে তা আকাশে ভেসে বেড়ায়
তীর হৃদয়ে এমনই বিঁধে রয়
না গলে যায়রে না উড়ে যায়

Tuesday, 13 May 2008

অভিমান

আমি আজও রেখেছি তোমাকে দেয়া- না বলা প্রতিশ্রুতি
দূর থেকে নিরবে আজও ভালবাসি- চাইনি কখনও ক্ষতি
আঘাত দিয়েছি, আঘাত পেয়েছি- পারিনি করতে ঘৃণা
থেকো ভালো এই ছিল- সদা মোর কামনা
দূরে সরে গিয়ে করেছি পুরণ- তোমার মনোবাসনা
জানি একদিন বুঝবে তুমি- আমার ছিলনা কোনো ভান
হয়তো সেদিন রবোনা আমি- রবে শুধু নিরব অভিমান

Sunday, 23 March 2008

বন্ধু তুমিও?

তোমার সেতারে যে তার বেঁধেছিলাম আমি,
চাওনি তুমি শুনুক কেউ সে সুরের ঝংকারখানি,
পেয়েছো ভয় হবে বোধহয় বদনাম ও পারিবারিক মানহানি।

মুখ ফুটে বলতে একবার শুধু তুমি পাওনা কাউকে ভয়,
আমি যে শুধু তোমারি, তুমি ছাড়া এ জীবনে আর কেউ আমার নয়,
লড়তাম আমি সবার সাথে করতাম বিশ্বজয়।

চেয়েছিলাম মিত্র হতে কিন্তু আমার ভাগ্যের একি পরিহাস হায়,
সেই ভুলে ভরা গল্প- কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়,
অসফল হয়েছি আমি বার বার কিন্তু শুধুই কি নিজের ইচ্ছায়?

Wednesday, 19 March 2008

একটি অতৃপ্ত আত্মার জবানবন্দি

মাঝ রাতে প্রচণ্ড অস্বস্তিতে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। সারা শরীর ছটফট করছে, হৃদ্‌স্পন্দন প্রচণ্ড তীব্র। না পারছি শুতে, না পারছি বসতে। ঘাড় এবং মাথায় চাপ ধরা ব্যথা। চোয়ালটা যেন কেমন শক্ত হয়ে আসছে। শিরদাঁড়া দিয়ে যেন একটা শীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে। এই চরম অস্বস্তিতে আর থাকতে পারছিনা। মনটাকে প্রচণ্ড একটা মৃত্যুভয় গ্রাস করে নিচ্ছে। আর বিছানায় থাকতে পারলাম না। অদ্ভুত একটা ঘোরের মধ্যে কোনোরকমে মশারি সরিয়ে খাট থেকে নেমে এলাম। টালমাটাল পায়ে অন্ধকারের মধ্যে আমার ঘর থেকে বেরিয়ে খাবার ঘর এবং বসার ঘর পেরিয়ে যেতে চাইছিলাম মা বাবার ঘরে। মা-কে ডেকে বলতে চাইছিলাম - "মা, আমার শরীর খুব খারাপ লাগছে ..."। কিন্তু নাহ্‌, যেতে পারলাম না। দরজার কাছে এসে পড়ে গেলাম। অর্ধেক শরীর আমার ঘরে, বাকী অর্ধেক খাবার ঘরে। অনেকক্ষণ কোনো হুশ নেই।
এইভাবে কতক্ষণ যে পড়ে আছি, জানিনা। হঠাৎ খুব শীতের অনুভুতি হতে লাগল। তারপর একসময় আর কোনো অনুভুতি নেই। তারপর উঠে দাড়ালাম। মেঝেতে কালচে মত চটচটে কী যেন একটা তরল পড়ে ছড়িয়ে আছে? চটচটে তরলটা এড়িয়ে কিছুটা সরে আসলাম। ভাল করে দেখবার চেষ্টা করলাম। দরজার কাছে কে যেন পড়ে রয়েছে? কেমন চেনা চেনা লাগছে! হ্যাঁ, একে তো আমি চিনি। কতবার আয়নায় দেখেছি এর প্রতিচ্ছবি। এ তো আমি। কী আশ্চর্য! নিজেকে নিজে দেখছি কি করে? সামনে কোন আয়না তো নেই। আমি এমনভাবে মেঝেতে শুয়ে রয়েছি কেন? নাক দিয়ে মুখ দিয়ে কালচে লাল মত তরলটা গড়িয়ে মেঝে ভেসে যাচ্ছে।
এবার সম্বিত ফিরলো। বুঝতে পারলাম- আমি আর নেই। মানে, আমার দেহের মৃত্যু হয়েছে। এখন আমি হলাম শুধুই এক অতৃপ্ত আত্মা।
সব কিছু কেমন অদ্ভুত লাগছে। নিজের মৃত্যুতে, চরম অতৃপ্তিতে নিজেরই কাঁদতে ইচ্ছে করছে। বাবা মা'র ঘরে যেয়ে দেখি ওরা ঘুমাচ্ছে। এই তো সবে তিন ঘন্টা আগে ওরা শুতে গেল। ওদের ডাকতে গিয়েও আর ডাকতে পারলাম না। থাক না আরেকটু ঘুমিয়ে, খুব মায়া হল। প্রথম সন্তানের মৃত্যু শোক ওরা কিভাবে সইবে? শেষবারের মত মা'র পাশে শুতে ইচ্ছে করল। মা'কে জড়িয়ে ধরে ডাকতে ইচ্ছে করল - "মাআআআ"।
এত কাছে মা'কে কোনো দিনও পাইনি। বেঁচে থাকতে, ঘুম থেকে উঠে দেখতাম, মা অফিসে যাবার জন্য তৈরি। ইস্কুল থেকে এসে বিকালে, ঢেকে রেখে দেওয়া খাবার নিজে হাতে বেড়ে নিয়ে খেয়ে, মা'র ছেড়ে যাওয়া শাড়ীটাকে পাশে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। ঐ শাড়ীটাতে একটা অদ্ভুত সুন্দর মা মা গন্ধ থাকতো।
পাশ ফিরে বাবার দিকে তাকালাম। দুঃখে গলা বন্ধ হয়ে গেল। বাবাকে জড়িয়ে কেঁদে বললাম - "বাবা, আমি তোমার কোনো স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি। আমি সত্যই Good for nothing."
একী! কেউ কিছু টের পাচ্ছে না কেন? ওওও! টের পাবে কী করে? আমি তো শুধুই এক অতৃপ্ত আত্মা।
ভোর হয়ে গেছে, পাখীরা ডাকতে শুরু করেছে, চারিদিক আস্তে আস্তে আলোকিত হয়ে উঠছে। এর পরে সব ঘটনা দ্রুত ঘটতে লাগলো। মা'র ঘুম ভাঙ্গলো। অভ্যেস বসতঃ, চা করতে যাবার আগে মা একবার আমার ঘর থেকে ঘুরে আমাকে দেখে যায়। আজকেও দেখতে এসে ঘুম চোখে দরজার কাছে হোঁচট খেল। নিচে তাকিয়ে দেখে আমি পড়ে আছি। চিৎকার করে উঠে মা, বোন আর বাবাকে ডাকলো। ওরা তিনজনে কোনোরকমে আমার শরীরটাকে ধরে খাটে শুয়ে ডাকতার ডাকলো।
ডাকতার এসে পরীক্ষা করে আমার ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দিল। একে একে আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধবেরা এল। পাড়া-প্রতিবেশীরা এল। হা হা!! এইবার বেশ মজাই লাগছে।
সারা ঘরে ফুল, মালা, ধুপ ও সুগন্ধির গন্ধে ম ম করছে। আর কিছুক্ষণ পরেই আমার শরীরটাকে নিয়ে যাওয়া হবে শ্মশানে। শেষবারের মত নিজেকে দেখছি। কয়েকটা মাছি নাকের কাছে, মুখের কাছে, কানের কাছে বসছে আবার উড়ে যাচ্ছে।
এই তো জীবন! আর কিছুক্ষণ পরে সাধের এই দেহটা দুমুঠো সাদা ছাই হয়ে যাবে।

Sunday, 6 January 2008

চঞ্চলা হরিণী

তুমি চঞ্চলা হরিণী, মনমরা তরুণী
হয়তো বা কোন নিষ্প্রাণ আত্মার সারথি

তুমি এইরূপ, সেইরূপ - সব রূপের সাক্ষী
হয়তো বা হৃদয়ের গভীরে জেগে থাকা বিশ্বস্ত কোন প্রহরী

তুমি দেখেছো পর্বতের অচলতা
দেখেছো সাগরের উন্মাদনা

তুমি গহীন বনের মাঝ দিয়ে হেটে যাওয়া উদ্ভ্রান্ত কোন পথিক,
হয়তো বা অজানা পথে পারি জমানো কোন ভবঘুরে ভাবুক

তুমি অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি
তুমি ক্লান্ত মাঝির সুরেলা কন্ঠের বেদনা ভরা সারি

তুমি দেখেছো আকাশের বিশালতা
দেখেছো পিপাসু মনের সঙ্কীর্ণতা

তুমি এক তীব্র অন্ধকার, প্রচণ্ড এক সঙ্কট
হয়তো বা আলোর মাঝে বাস করা জ্ঞান-তাপস

তুমি ক্লান্ত দুপুরে নিষ্পাপ প্রহরে হঠাৎ গর্জে ওঠা কোন আত্মার চিৎকার,
হয়তো বা শ্রোতা কোন মলিন বিমর্ষ মুখের না বলা কথার

সবশেষে দেখেছি আমি তোমাকে আমার মনের আয়নায়,
জানি না তুমি আসলেই কী? কেবল ভাবি তোমায়
মনে হয় আমরা আছি এক ঋদ্ধ আত্মার অবরুদ্ধ সত্তায়।

Blog Archive